ঢাকা , শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ , ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ভালুকায় পাঁচ বছরের শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল মোজাম্মেল বাবু ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদ নতুন মামলায় গ্রেফতার উগ্র জাতীয়তাবাদ বড় অর্জনের পথে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে-শিক্ষা উপদেষ্টা নাসির-তামিমার মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ, ২৮ এপ্রিল আত্মপক্ষ সমর্থন বাংলাদেশ-পাকিস্তান রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের বৈঠক শোক সংবাদ ছয় দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ ২০ কিশোর বাংলাদেশিকে মিয়ানমার থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে সাজা শেষেও কারাগারে ১৫৪ বিদেশি বন্দি অবরোধ বৃষ্টি ও যানজটে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি কুয়েটের সাবেক ভিসিসহ ১৫ জনের নামে আদালতের নির্দেশে ২ মামলা সেই আলোচিত কর কর্মকর্তাকে পুনর্নিয়োগ ডিএসসিসি’র নতুন দল নিয়ে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে সংলাপে বসবে-ইসি বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় শিগগিরিই বাস্তবায়ন হবে -প্রধান বিচারপতি জাতি তাকিয়ে আছে, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতেই হবে-ড. ইউনূস সুস্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ না থাকায় অসন্তুষ্ট বিএনপি গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে না ইসরায়েলের লালমাইয়ে নিখোঁজ শিশুর মাথার খুলি হাড় উদ্ধার নারী হত্যায় স্বামীসহ ২ জনের মৃত্যুদণ্ড স্বাস্থ্যের সেই গাড়িচালকের ৫, স্ত্রীর ৩ বছর দণ্ড
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে সাক্ষাৎকার ড. ইউনূসের

শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট দলের দেশে কোনো জায়গা নেই

  • আপলোড সময় : ৩০-১০-২০২৪ ১১:৪৬:১৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩০-১০-২০২৪ ১১:৪৬:১৯ অপরাহ্ন
শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট দলের দেশে কোনো জায়গা নেই
ক্ষমতাচ্যুত কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ‘ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্য’ প্রকাশ করছে বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, দেশের রাজনীতিতে এ দলের এখন ‘কোনো জায়গা’ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব মন্তব্য করেন। গতকাল বুধবার পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে।
পত্রিকাটি বলেছে, এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অধ্যাপক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যান দলটির প্রধান ও টানা ১৫ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা শেখ হাসিনা।
সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তার অন্তর্বর্তী সরকার এখনই ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইবে না। পত্রিকাটি বলছে, সর্ববৃহৎ প্রতিবেশী দেশের (ভারত) সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক উত্তেজনায় উসকানি সৃষ্টিকারী মুহূর্ত এড়াতেই হয়তো এ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, স্বল্প মেয়াদে হলেও নিশ্চিতভাবেই তার (শেখ হাসিনা) কোনো জায়গা নেইÑ আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা নেইÑ বাংলাদেশে।
নিজেদের স্বার্থ বাড়িয়ে নিতে তারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ (দমনÑপীড়ন) করেছে, তারা রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, বলেন ড. ইউনূস। তিনি আরও বলেন, একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোনো ফ্যাসিস্ট দলের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়।
শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুক্ষিগত করা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পরিচালনা এবং সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোয় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীরা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তার দলকে রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে দূরে সরিয়ে রাখা, নাকি সংস্কার, নাকি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা উচিত, সে বিষয়ে বিতর্ক চলছে।
ড. ইউনূসের ধারণা, আওয়ামী লীগ একটি দুর্বল ও ব্যর্থ দলে পরিণত হতে পারে। তবে তিনি গুরুত্ব দেন যে তার অন্তর্বর্তী প্রশাসন দলটির ভাগ্য নির্ধারণ করবে না। কেননা, এটি কোনো ‘রাজনৈতিক সরকার নয়’।
আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যকার ‘ঐকমত্যের’ ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া নিয়ে তাদেরই (রাজনৈতিক দলগুলোকে) সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
হাসিনা ভারতের কোথায় আছেন, তা পরিষ্কার নয়। সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, তার দল যেকোনো সময় নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত।
অর্থনীতির একজন সাবেক অধ্যাপক ও ‘দরিদ্রদের ব্যাংকার’ ড. ইউনূস ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে খ্যাতিমান এই অর্থনীতিবিদকে নিশানা বানান শেখ হাসিনা। তার (হাসিনা) সমালোচকেরা একে প্রতিহিংসার ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেন।
রাজনীতিতে যোগ দেওয়া বা কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করার ইচ্ছা তার নেই বলে জানিয়েছেন ড. ইউনূস। বলেছেন, নির্বাচনের সময়সূচি (এখনই) টানা হবে না। এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, আমাদের কাজ (বিভিন্ন বিষয়ের) নিষ্পত্তি করা ও নতুন সংস্কার এজেন্ডার বাস্তবায়ন। যখন নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ হবে, তখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করব।
শেখ হাসিনার পতনে তার সরকারের সবচেয়ে বড় বিদেশি সমর্থক ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বাধায় পড়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, তার সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইবে। তবে তা চাওয়া হবে শুধুই দেশের অভ্যন্তরীণ অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) রায়ের পর। ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও অন্য ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
তার (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে...রায় পেলে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরত আনার চেষ্টা করব আমরা। আমি মনে করি না যে রায় পাওয়ার আগে আমাদের এটি করার মতো কিছু আছে, বলেন ড. ইউনূস।
গত আগস্টে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংসতা চালানোর যে অভিযোগ তার মায়ের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা মিথ্যা। তার মা ‘কোনো বেআইনি কাজ করেননি’, তাই যেকোনো অভিযোগ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত তিনি।
ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নয়াদিল্লির অনেকে এ সরকারের প্রতি বৈরী মনোভাবাপন্ন রয়েছেন। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে সরকার পরিবর্তন হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
শেখ হাসিনা উৎখাত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাÑকর্মী হয় দেশের বাইরে পালিয়েছেন, নয় আত্মগোপন করে আছেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ছাত্রÑজনতার অভ্যুত্থানকালে সহিংসতায় বিক্ষোভকারী, পুলিশ, পথচারীসহ ৮০০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। তবে অভ্যুত্থানÑপরবর্তী সময়ে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক নির্যাতনÑনিপীড়ন চালানোর অভিযোগ নিশ্চিত করেনি মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
এ বিষয়ে ড. ইউনূস স্বীকার করেছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কিছু সহিংসতার ঘটনা এবং তাতে খুব অল্প প্রাণহানি ঘটেছে। অবশ্য তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় এসব হামলা হয়েছে। ধর্মীয় পরিচিতির কারণে তাদের ওপর হামলা হয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ (আগস্টে হামলার প্রসঙ্গ) আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছেন। সমালোচকেরা ওই বয়ানকে (হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা) ভিন্নরূপ দিয়েছেন।
নয়াদিল্লির কাছ থেকে সমর্থনের ঘাটতি তার সরকারকে ‘আহত’ করেছে বলেও মন্তব্য করেন নোবেলজয়ী এই অধ্যাপক। তবে বলেন, দেশে এলে মোদিকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানানো হবে। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছি যে আমরা প্রতিবেশী, আমাদের একে অপরের প্রয়োজন, আমাদের মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকতে হবে, যা যেকোনো দুই প্রতিবেশীর মধ্যে থাকা উচিত।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স